ক্যালিগ্রাফিস্ট (Calligraphist) হলেন সেই সকল ব্যক্তি যাঁরা ক্যালিগ্রাফ অর্থাৎ সৌখিন ও অতিসুন্দর হাতের লেখাতে বা হস্তলিপিতে দক্ষ।
আমাদের এই প্রতিবেদনে ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে , ক্যালিগ্রাফি কি ? বা ক্যালিগ্রাফ কি এই সব প্রশ্নগুলি উত্তর বিশদে পাবেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই ক্যালিগ্রাফিস্ট ব্যক্তিদের সরকারি দপ্তরের অত্যন্ত জরুরি নথিপত্র নকল করে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন হতো।
কথায় বলে প্রয়োজনই সৃষ্টির মাতা। তাই যেহেতু ঊনবিংশ শতাব্দীতে দক্ষ ক্যালিগ্রাফিস্ট কারিগরের খুব প্রয়োজন ও কদর ছিল তাই সেই সময় পৃথিবী সেরা ক্যালিগ্রাফিস্ট আর্টিস্টদের আবির্ভাব হয়েছিল ও তাদের জগৎজোড়া নাম ও ছিল।
ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে এটা জানার আগে আপনার ক্যালিগ্রাফ বিষয়টা কি সেটা বিশদে জানা প্রয়োজন।
ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে ? ক্যালিগ্রাফি বাংলা কি ? ক্যালিগ্রাফিস্ট মানে কি ?
ক্যালিগ্রাফি বাংলা ভাষাতে তর্জমা করলে হয় ” সৌখিন হস্তলিপি “। ক্যালি শব্দের অর্থ হলো সৌখিন বা সুন্দর আর গ্রাফি শব্দের অর্থ হলো আঁকা বা লেখা । তাই ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে এর অর্থ করতে হলে শব্দটির বিভাজন করলে হয় , যারা সৌখিন ও সুন্দর করে আঁকা ও লেখাতে দক্ষ।
যদিও প্রাচীন বিশ্বে ক্যালিগ্রাফিস্ট বলতে কেবলমাত্র সৌখিন নিপুন সুদক্ষ লেখকদের বোঝাতো , কিন্তু বর্তমান সময়ে ক্যালিগ্রাফিস্ট বলতে অক্ষর ও লেখা বিষয়ে আর্টিস্টদের ও বোঝায়। অর্থাৎ এখন যারা সৌখিন করে কাঠের উপর লেখে বা পাথরের ওপর সৌখিন করে লেখে বা কোনো কার্ডের ওপর দক্ষ হাতে সৌখিন অক্ষর ফুটিয়ে তোলে তাদের সবাইকেই ক্যালিগ্রাফিস্ট বলে।
ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে -এর ইতিহাস কি ?
প্রাচীন সময়ে বিভিন্ন দেশে ক্যালিগ্রাফিস্টদের বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে দেখা যায় ও শাসকদের চোখে ক্যালিগ্রাফি বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব পেত।
এখনো পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীন ক্যালিগ্রাফ নিদর্শনগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ক্যালিগ্রাফটি হলো চীন দেশে পাওয়া ষাঁড়ের কাঁধের হাড়ে বানানো লিপির ক্যালিগ্রাফটি। এই লিপি বর্তমান চীনদেশের লিপি থেকে কিছুটা আলাদা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই প্রাচীন লিপি থেকেই চীন দেশের বর্তমান লিপির সৃষ্টি।
এশিয়ার মধ্যে শুধু যে চীন দেশেই ক্যালিগ্রাফিস্টদের আবির্ভাব হয়েছিল তা নয়। বরং এশিয়ার মধ্যে ভিয়েতনাম , জাপান , কোরিয়া ইত্যাদি দেশে ক্যালিগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফিস্টদের বেশ প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিলো।
পাশ্চাত্য দেশে অর্থাৎ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্যালিগ্রাফ দেখার খুব প্রচলন ঘটেছিলো।
পাশ্চাত্যের ক্যালিগ্রাফিস্টরা মূলত ল্যাটিন ভাষাকেই ক্যালিগ্রাফ লেখার জন্য ব্যবহার করতো। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ বছর আগে ল্যাটিন বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছিল।
এর পর ইউরোপের ক্যালিগ্রাফিস্ট শিল্পীরা রোমান ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল বর্ণ ব্যবহার করতে থাকে ক্যালিগ্ৰাফ লেখার জন্য। বর্তমান বিশেষজ্ঞারা মনে করেন এই ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল বর্ণ থেকেই বর্তমান ইংরেজি ভাষার বড়ো হাতের অক্ষরগুলি সৃষ্টি হয়েছে।
এর পর রাস্টিক ক্যাপিটাল রোমান অক্ষর ব্যবহার হতে শুরু হয় ক্যালিগ্রাফ লেখার জন্য। এই বর্ণমালার অক্ষরগুলি সাধারণতঃ দেওয়ালে ক্যালিগ্রাফি লেখার জন্যই ব্যবহৃত হতো।
প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে উনসিয়াল বর্ণমালার সৃষ্টি হয় ক্যালিগ্রাফি লেখার জন্য। এই বর্ণমালার অক্ষরগুলি অনেকটাই বর্তমান সময়ের ইংরাজীর মতো।
যেহেতু মঠগুলিতে লেখা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলি অনুলিপি করার জন্য আনসিয়াল লিপি আরও উপযুক্ত বলে মনে হয়েছিল।
চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে যখন রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং ইউরোপ অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে তখন এই মঠগুলিই ক্যালিগ্রাফিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করেছিল।
উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ক্যালিগ্রাফিস্ট
প্রাচীন সময়ের মতো এখন আর বাইবেল কপি বা নকল করার জন্য ক্যালিগ্রাফিস্ট-দের ব্যবহার করা হয় না। ঊনবিংশ শতকেও ক্যালিগ্রাফিস্ট শিল্পীদের বেশ খ্যাতি ও গুরুত্ব ছিল। এখন ও ক্যালিগ্রাফিস্ট জীবিকাতে বেশ কিছু শিল্পী রয়েছেন।তাঁরা শুধু মাত্রা কাগজে ক্যালিগ্রাফ করেন না। তাঁরা অন্য অনেক বস্তুর উপর ক্যালিগ্রাফি গঠন করে থাকেন।
বর্তমান সময়ের ভারতবর্ষের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ক্যালিগ্রাফিস্ট হলেন হিরণ মিত্র , আর কে যোশী।
শেষ কথায় ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে
আশাকরি, আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে তা ভালো ভাবে আমাদের এই প্রতিবেদনটি থেকে পেলেন।