উনিশ শতকের বাংলার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর (middle class) অবদান সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, মধ্যবিত্ত কাকে বলে এর উত্তর লুকিয়ে আছে উনিশ শতকের ভারতবর্ষে।
এই সময় শিক্ষিত পেশাদারি মানুষ মধ্যবিত্ত তথা ভদ্রলোক নামে পরিচিত ছিলেন। অর্থাৎ উনিশ শতকের শিক্ষিত, চাকুরীজীবি মানুষদেরই মধ্যবিত্ত নামে গণ্য করা হয়।
আজও শিক্ষিত চাকুরিজীবীরা মধ্যবিত্ত হিসেবে সমাজে পরিচিত।
মধ্যবিত্ত শ্রেণী কাকে বলে । মধ্যবিত্ত কাকে বলে
ঊনিশ শতকে সমাজ মূলত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উচ্চবিত্ত বা ধনী , মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত।
কিছু মানুষ যাঁরা ইংরেজ শাসকের অনুগত বেনীয়া বা বণিক (merchant) অর্থাৎ মহাজন সম্প্রদায়। এদের উচ্চবিত্ত বা ধনী হিসেবে সম্বোধন করা হত।
এই সময় ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যেসব ভারতীয়রা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস বা প্রশাসনে চাকরি করার সুযোগ পান , এঁদের মধ্যবিত্ত বলা হতো। এঁরা বিদ্যা ও বিত্তের সমাবেশে মধ্যবিত্ত বা ভদ্রলোক বলে সমাজে আখ্যায়িত হতেন।
অর্থাৎ, মাধ্যবিত্ত মানুষদেরই ভদ্রলোক বলে সম্বোধন করা হতো বা করা হয়। মূলতঃ শিক্ষিত পেশাদারি মানুষরাই মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হতেন।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ইতিহাস । The History of Middle class
ব্রিটিশ শাসক বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারতবর্ষে যদি ইংরেজি শিক্ষা চালু না করা হয় তাহলে লন্ডন থেকে ইংরেজি জানা মানুষদের এখানে এনে কেরানি পদে নিয়োগ করতে হবে। লন্ডনের মানুষদের বেতন দিতে হলে অনেক বেশি বেতন দিতে হবে, যা কোম্পানির জন্য অনেক বেশি ব্যয় সাপেক্ষ হবে।
তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে তাঁরা ভারতবাসীদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। আর এই সিদ্ধান্তের মধ্যেই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তির বীজ লুকিয়ে ছিল।
ভারতবাসীকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গিয়ে চালু হলো উডের ডেসপ্যাচ। প্রচুর ইংরেজি স্কুলও চালু হলো।
এই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও ইংল্যান্ডের সংস্কৃতিতে অনুপ্রাণিত প্রচুর ভারতীয় তৎকালীন বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস, স্কুল , ও প্রশাসনিক দপ্তরগুলিতে চাকরি পেলো। এর ফলে উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকেই ভারতীয় সমাজে একটি নতুন শ্রেণীর ভারতীয়দের আবির্ভাব লক্ষ করা গেল।
এই নতুন শ্রেণীই আসলে মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত। এঁদের আবার ভদ্রলোকও বলা হতো। ভারতীয় সমাজে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল।
এই নতুন শ্রেণীর উন্মেষের মূল চালিকাশক্তি ছিল “বিদ্যা’ ও “বিত্ত”,
অর্থাৎ এঁরা ইংরেজি তথা
কিভাবে মধ্যবিত্ত শব্দটির সৃষ্টি । How does the word Middle class appreared
উনিশ শতকের শিক্ষিত পেশাদারি মানুষ ভদ্রলোক নামে পরিচিত হন। ১৮২৯ সালে জুন মাসে বঙ্গদূত পত্রিকাতে প্রথম “মধ্যবিত্ত শ্রেণী ” শব্দটি ব্যবহার হয়।
উনিশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কৃতি জগতে এঁরাই ছিলেন মূল সামাজিক ভিত্তি।
মধ্যবিত্ত শ্রেণী কিভাবে বাংলা তথা ভারতীয় সমাজে প্রভাব ফেলেছিল ?
মধ্যবিত্ত শ্রেণী সমাজ চেতনা ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। তৎকালীন বাংলা পত্র -পত্রিকা গুলিতে বার বার সমাজের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন বার বার ফুটে উঠেছে। মধ্যবিত্ত সমাজের অভ্যুত্থান তৎকালীন সংবাদপত্র ও সাহিত্যের মাধ্যমে বারে বারে ফুটে উঠেছে।
- ✍সাময়িক পত্র ও সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হল ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষায় রচিত সমাচার দর্পন।
- ✍এর পর সমাজ সংস্কারক রাম মোহন রায় সংবাদ কৌমুদি নামে এক বাংলা সাপ্তাহিক প্রকাশ করেন।
- ✍পরবর্তী সময়ে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা বাংলার সমাজ জীবনের দিকগুলি তুলে ধরে।
- ✍উনিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ঈশ্বরগুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকরের তৎকালীন সামাজিক বিপ্লবের পেছনে বিশেষ ভূমিকা ছিল।