উদ্ভিদ হরমোন কত প্রকার কি কি pdf|অক্সিন জিবেরেলিন সাইটোকিনিন ইথিলিন অ্যাবসিসিক অ্যাসিড |plant Hormones in bengali | Types of plant hormones | Auxin, cytokinin, gibberellin, ethylene

0
465
উদ্ভিদ হরমোন-plant hormon
উদ্ভিদ হরমোন-plant hormon

উদ্ভিদ হরমোন সংজ্ঞা । Plant hormone: যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ জীবদেহের বিশেষ ধরনের নির্দিষ্ট কতগুলি কোশ বা কোশসমষ্টি (বা প্রাণীদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি) থেকে উৎপত্তি লাভ করে অতি অল্পমাত্রায় লক্ষ্য-কোশে বাহিত হয়ে কোশগুলির স্বাভাবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কাজের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তা হল হরমোন (hormone)। হরমোন (hormone) শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Hormao’ থেকে এসেছে, এর অর্থ হল ‘আমি জাগ্রত করি’।

বেলিস ও স্টারলিং 1905 সালে হরমোন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।

উদ্ভিদ হরমোন এর কাজ কি । functions of plant hormones

সংবেদনশীলতা ও সাড়া প্রদান, বীজের অঙ্কুরোদ্গম, উদ্ভিদের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি, মুকুলোদ্গম, ফুলফোটা ইত্যাদি কাজে উদ্ভিদ হরমোনের গুরুত্ব সর্বাধিক।

উদ্ভিদ হরমোনের প্রকারভেদ | Types of plant hormones

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন সাধারণভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক বা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। কিছু হরমোন উদ্ভিদদেহে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লেষিত হয় এবং এদের রাসায়নিক প্রকৃতি ও কাজ জানা গেছে তারা হল প্রাকৃতিক হরমোন। যেমন—

অক্সিন, জিব্বেরেলিন, সাইটোকাইনিন, অ্যাবসিসিক অ্যাসিড, ইথিলিন (গ্যাসীয় হরমোন) ইত্যাদি। আবার প্রাকৃতিক হরমোনের মতো গঠনযুক্ত যে হরমোনগুলিকে কৃত্রিমভাবে রসায়নগারে সংশ্লেষ করা হয়েছে তারা হল কৃত্রিম হরমোন। যথা— ইন্ডোল বিউটাইরিক অ্যাসিড (IBA), ইন্ডোল প্রোপিয়োনিক অ্যাসিড (IPA), বেঞ্জিমিডাজোল ইত্যাদি। এবার আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ হরমোন সম্বন্ধে জানব।

উদ্ভিদ হরমোন অক্সিন : অক্সিন হরমোন কাকে বলে । অক্সিন হরমোনের ভূমিকা । Importance of plant hormone auxin in bengali

অক্সিন হরমোনের উৎস । source of auxine hormone in bengali

মূল ও কাণ্ডের অগ্রস্থ ভাজক কলা, অপরিণত পাতা, ভ্রূণমুকুলাবরণী, পরাগরেণু ইত্যাদি হল অক্সিনের উৎস। রাসায়নিক গঠন : অক্সিন হল C, H, O ও মৌল দ্বারা গঠিত জৈব অ্যাসিড ধর্মী উদ্ভিদ হরমোন। পরিবহন : জলে দ্রবণীয় এবং এর মেরুবর্তী পরিবহণ ঘটে। সক্রিয় পরিবহন পদ্ধতিতে অক্সিনের মেরুবর্তী পরিবহন ঘটে এবং পাতায় উৎপন্ন অক্সিন ফ্লোয়েমের মাধ্যমে উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গে পরিবাহিত হয়।

অক্সিন হরমোনের ভূমিকা । অক্সিনে হরমোনের গুরুত্ব । Importance of auxin plant hormone in Bengali । অক্সিন হরমোনের তিনটি কাজ লেখ:

অক্সিন হরমোনের গুরুত্ব উদ্ভিদের জন্য অপিরিসীম। ট্রপিক চলনে, কোষের বৃদ্ধিতে, প্রকটতা দেখাতে অক্সিনের ভূমিকা লিখে শেষ করা যাবে না। নিচে অক্সিন হরমোনের তিনটি কাজ বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

(i) ✍অগ্রসস্থ প্রকটতা : অগ্রমুকুলের দ্বারা কাক্ষিক মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার ঘটনা হল অগ্রসস্থ প্রকটতা। অক্সিন অগ্রস্থ প্রকটতাকে ত্বরান্বিত করে, ফলে উদ্ভিদ লম্বা হয় ও শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি ব্যাহত হয়।

(ii) ✍কোশের আকার বৃদ্ধি : অক্সিন কোশপদাস্থিত প্রোটন পাম্পকে (H+-ATPase) সক্রিয় করে H+-কে কোশপর্দা ও কোশপ্রাচীরে মধ্যবর্তী স্থানে প্রেরণ করে, ফলে কোশ প্রাচীরের pH কমে যায় ও এক্সপ্যানসিন উৎসেচক সক্রিয় হয়ে কোশপ্রাচীরকে নমনীয় করে। এর ফলে নতুন কোশ প্রাচীর উপাদান সঞ্চিত হলে কোশের আকার বৃদ্ধি পায়। কোশের আকার বৃদ্ধির এই তত্ত্বটি হল অ্যাসিড গ্রোথ হাইপোথেসিস।

(iii) ✍কোশের বিভাজন : উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলের কোশগুলির বিভাজনে অক্সিন সাহায্য করে।

(iv) ✍ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ-এ অক্সিন হরমোনের গুরুত্ব (auxin in tropic movement of plant): ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে অক্সিন হরমোন দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে। অক্সিন হরমোনের বিভিন্ন ঘনত্বের তারতম্যের দ্বারা উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

➡️বিশদে পড়ুন : ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন হরমোনের ভূমিকা

জিব্বেরেলিন (Gibberellin)

জিব্বেরেলিন হরমোনের উৎসস্থল । source of Gibberellin hormone | জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের কোন অংশে দেখা যায় ?

প্রধানত পরিণত বীজ, অঙ্কুরিত বীজের বীজপত্র, পাতার বর্ধিষু অঞ্চল ইত্যাদি হল জিব্বেরেলিন হরমোনের উৎসস্থল। তাই এই সকল স্থানে জিব্বেরেলিন দেখা যায়।

রাসায়নিক গঠন । chemical structure of Gibberelin hormone

জিব্বেরেলিন বা জিব্বেরেলিনের উৎস। জিব্বেরেলিক অ্যাসিড (GA) হল নাইট্রোজেনবিহীন জৈব অম্ল। এটি প্রধানত C, H ও O নিয়ে গঠিত।

পরিবহণ : (i) জলে দ্রবণীয় এবং জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাধ্যমে এর পরিবহণ উভয় দিকেই ঘটেছে।

Importance of Gibberellin | জিব্বেরেলিন হরমোনের কাজ কি । জিব্বেরেলিনের কাজ কি

অক্সিনের মতোই জিব্বেরেলিনের কাজ অনেক। gibberellin hormon এর গুরুত্ব অপরিসীম। জিব্বেরেলিনের কাজ অর্থাৎ গুরুত্বগুলি নিচে আলোচনা করা হল।

(i)✅ বীজের সুপ্তাবস্থার ভাঙ্গন : অনুকূল পরিবেশে জলের উপস্থিতিতে বীজমধ্যস্থ সুপ্ত ভ্রুণ থেকে (oat) গাছের ভ্রুণমুকুলাবরণীতে GA নির্গত হয়ে বিভিন্ন আর্দ্র বিশ্লেষক উৎসেচককে (যথা— a-অ্যামাইলেজ, প্রোটিয়েজ, রাইবোনিউক্লিয়েজ, ডি-গ্লুকোনেজ ইত্যাদি) সক্রিয় করে। সক্রিয় আর্দ্র বিশ্লেষক উৎসেচক বীজের সস্যকে বিশ্লিষ্ট করে দ্রবণীয় শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিউক্লিওসাইড ইত্যাদিতে রূপান্তরিত করে যা ভ্রূণ দ্বারা শোষিত হলে ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটে এবং বীজ অঙ্কুরিত হয়।

(ii)✅ মুকুলের সুপ্তাবস্থার ভাঙ্গন : শীতকালে নিম্ন তাপমাত্রায় যে সব মুকুল সুপ্ত অবস্থায় থাকে, তাদের উপর GA প্রয়োগ করলে তাদের সুপ্তাবস্থা বিনষ্ট হয়ে বৃদ্ধি ঘটে।

(iii)✅পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি : খর্ব বিটপসম্পন্ন উদ্ভিদে নিম্ন মাত্রায় GA প্রয়োগ করলে উদ্ভিদের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে। ফলে উদ্ভিদটি স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য সম্পন্ন হয়। GA প্রভাবিত উদ্ভিদের এইরূপ পর্বমধ্য বৃদ্ধিকে বোল্টিং (bolting) বলে।

(iv)✅ফলের বৃদ্ধি : বাইরে থেকে GA3 প্রয়োগ করলে ফলের আকার শালিউরন বৃদ্ধি পায়, যেমন— আঙ্গুর, কলা প্রভৃতির বৃদ্ধি। এ ছাড়া GA3 প্রয়োগে আঙ্গুরের থোকায় ফলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

(v)✅ পুষ্প পরিস্ফুটন ও লিঙ্গ পরিবর্তন : বাইরে থেকে GA প্রয়োগ করলে দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদ হ্রস্ব-দিবা অবস্থাতেও ফুল উৎপন্ন করতে পারে। কিছু কিছু হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদ GA দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফুল উৎপন্ন করে। এ ছাড়া শশা, কুমড়ো প্রভৃতি গাছে GA3-এর ঘনত্ব বেশি হলে পুরুষ ফুল ও ঘনত্ব কম হলে স্ত্রীফুল উৎপন্ন হয়। পরিণতি : জিব্বেরেলিন-গ্লাইকোসাইডরূপে GA নিষ্ক্রিয় হয়।

সাইটোকাইনিন (Cytokinin) :

উৎস : নারকেলের তরল সস্যে (ডাব বা নারকেলের জল), ভুট্টার সস্যে, অঙ্কুরিত বীজে এবং বিভিন্ন ফুল ও ফল, যথা— আপেল, ন্যাসপাতি, কুল ইত্যাদির নির্যাস হল সাইটোকাইনিনের উৎস। রাসায়নিক গঠন : সাইটোকাইনিন হল ক্ষারীয় প্রকৃতির হরমোন। এটি C, H, Nও O-এর যৌগ। পরিবহন : এটি জলে দ্রবণীয় এবং জাইলেমের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।

ভূমিকা :

  • 🌴(i) কোশের বিভাজন যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিনের (IAA) উপস্থিতিতে সাইটোকাইনিন সাইটোকাইনেসিসে সাহায্য করে কোশ বিভাজনকে তরান্বিত করে।
  • 🌴(ii) পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি : সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় (অগ্রসস্থ প্ৰকতা বিনষ্ট হয়) এবং কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
  • 🌴(iii) বার্ধক্য বিলম্বিতকরণ : রিচমন্ড এবং ল্যাং পরীক্ষামূলকভাবে দেখান যে উদ্ভিদ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো পাতায় সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে পাতাটির ক্লোরোফিল, প্রোটিন ইত্যাদি দেরিতে বিনষ্ট হয়। অর্থাৎ পাতাটির বার্ধক্য বিলম্বিত হয়। এই ঘটনাকে রিচমন্ড-ল্যাং প্রভাব (Richmon-Lang Effect) বলা হয়।
  • 🌴(iv) বীজের সুপ্তাবস্থার ভাঙ্গন : সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে লেটুস, তামাক ইত্যাদির বীজের সুপ্তাবস্থা বিনষ্ট হয় বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।
  • 🌴(v) অঙ্গ-বিভেদ নিয়ন্ত্রণ : সাইটোকাইনিন অবিভেদিত কোশপুঞ্জ থেকে অঙ্গ সৃষ্টিতে (যথা— কাণ্ড) সাহায্য করে এবং প্রো-প্লাসটিড থেকে প্লাসটিড গঠনে সাহায্য করে। পরিণতি : উপযুক্ত মাত্রায় সাইটোকাইনিন কোশীয় বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পর সাইটোকাইনিন অক্সিডজ উৎসেচক দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম হরমোনের ভূমিকা :

1. শাখা কলম : গোলাপ, ডালিয়া, জবা প্রভৃতি উদ্ভিদের শাখার কাটা প্রান্ত কৃত্রিম অক্সিন (NAA, IBA) দ্রবণে ডুবিয়ে মাটিতে বসালে কাটা প্রান্ত থেকে মূল দ্রুত উৎপন্ন হয়, ফলে শাখাটি নতুন চারাগাছ হিসেবে বেড়ে ওঠে। 2. অপরিণত ফলের মোচন রোধ : কৃত্রিম অক্সিন (IBA, NAA) ও কৃত্রিম জিব্বেরেলিন প্রয়োগে আঙ্গুর, ন্যাসপাতি, আপেল, টম্যাটো প্রভৃতি গাছের অপরিণত ফলের মোচন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। 3. আগাছা দমন : বিভিন্ন কৃত্রিম অক্সিন (2,4-D, MCPA, NAA প্রভৃতি) এককভাবে বা মিশ্রণ হিসেবে প্রয়োগ করে আগাছা দমন করা সম্ভব হয়েছে। 4. পার্থেনোকাপি : বিভিন্ন কৃত্রিম অক্সিন (IBA, NAA)ও জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে বীজহীন ফল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। যেমন— বীজহীন আঙ্গুর, তরমুজ, আনারস, টমাটো, পেয়ারা, আপেল, ন্যাসপাতি, কলা ইত্যাদি। এই পদ্ধতিতে বীজহীন উৎপাদন হল পার্থেনোকার্পি এবং পার্থেনোকার্পি পদ্ধতিতে উৎপন্ন ফল পার্থেনোকার্পিক ফল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here